খবরের বিস্তারিত...

আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদী

বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া এক সিপাহসালার- আমাদের ইমামে আহলে সুন্নাত

বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া এক সিপাহসালার- আমাদের ইমামে আহলে সুন্নাত
~~~~শাহীদ রিজভী, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ

আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয়েছিল কখন থেকে? ১৯৭১ সালে? ১৯৫২? ১৯৪৭? ১৯৪০? ১৯০৫-৬? নাকি তারও আগে! কখন থেকে?
১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যাওয়ার পর এদেশের মুক্তিকামী মানুষ ব্রিটিশ বেনিয়াদের কবল থেকে স্বদেশকে মুক্ত করতে মরণপণ লড়াই শুরু করে। শহীদ তিতুমীর (১৭৮২-১৮৩১), ক্ষুদিরাম বসু (১৮৮৯-১৯০৮), সূর্যসেন (১৮৯৪-১৯৩৪) প্রমূখ দেশপ্রেমিক সূর্যসন্তানরা তো আসেন আরো অনেক পরে। এঁদের অনেক আগে পলাশী যুদ্ধের মাত্র সাত বছর পরে ১৭৬৪ সালে প্রথম এদেশী সিপাহীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। আর ১৮৫৭ সালে সিপাহীদের মহাবিদ্রোহ সমগ্র ভারতকে মুক্তির চেতনায় উত্তাল করে বৃটিশ রাজের সিংহাসনে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিল। তারই পুর্বগামিনী ছায়া দেখা যায় পলাশী যুদ্ধের মাত্র সাত বছর পরে।
আসুন, আমরা কিছু বেদনাময় ইতিহাস জেনে নিই, যা আজ আত্মভোলা এ জাতির অবহেলায় বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে বসেছে।
আন্দামান জেলখানার জেলার হিসেবে এসেছিলেন এক পন্ডিত সজ্জন ব্যক্তি। তিনি ছিলেন একজন বিদগ্ধ দার্শনিক। দর্শন শাস্ত্রের একটা জটিল বই পড়তে গিয়ে অনেক শব্দের অর্থ ও বিষয় বুঝতে তাঁর বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। তিনি কারাগারে দায়িত্বরত তাঁর সহকর্মীদের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন কেউ সেই জটিল বিষয়গুলো নিয়ে তাঁকে সাহায্য করতে পারেন কিনা। এক অফিসার জানান তাঁর জানামতে ভূ-ভারতে ঐ সময় দ্বিতীয় কোন জ্ঞানী ব্যক্তি নেই যিনি এই সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা রাখেন। তবে সুখের কথা হল, সেই সমস্যা সমাধানের একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি বৃটিশ সরকার কর্তৃক দ্বীপান্তরিত হয়ে আন্দামান জেলখানায় কয়েদী অবস্থায় আছেন।
——————–****
আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদী। জন্ম ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে। বাড়ী অযোধ্যার খায়রাবাদে, তাই তাকে খায়রাবাদী বলা হয়। তাঁর প্রথম পরিচয় তিনি ভারতের একজন শ্রেষ্ঠ আলেম, বিখ্যাত সাহিত্যিক,কবি ও ঐতিহাসিক। তাঁর গর্বময় দ্বিতীয় পরিচয় হলো,তিনি ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের একজন প্রত্যক্ষ সংগ্রামী।
ভারতকে স্বাধীন করতে গিয়ে তিনি বন্দী হন। বিচারের নিষ্ঠুর সিদ্ধান্তে তার সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয় আর তাকে নির্বাসন দেওয়া হয় কুখ্যাত আন্দামানে। সেখানেই তাঁকে বাকিটা জীবন কাটাতে হয়।
আন্দামান দ্বীপ:
ইংরেজ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করায় মাওলানা ফজলে হককে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করায় মাওলানা ফজলে হককে আন্দামানে ইংরেজদের জেলে এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছিল। তার ছাদ দিয়ে বৃষ্টি পড়তো। ফলে পায়খানার মতো ছোট কামরায় পানি জমে যেত। হাফ প্যান্ট আর ছোট জামা তাকে পরতে দেয়া হয়েছিল। খাদ্য হিসেবে দেয়া হত নানা জাতের মাছ সিদ্ধ,যা ছিল অত্যন্ত দুর্গন্ধময় ও খাবার অযোগ্য। সময়ে সময়ে বালি মেশানো রুটিও দেওয়া হত। যাহোক তাই দিয়েই ক্ষুধা নিবারণ করতেন। ঠাণ্ডা পানির পরিবর্তে গরম পানি দেয়া হতো। অবশ্য কিছুক্ষণ রাখলেই তা ঠাণ্ডা হবার কথা, কিন্তু তার উপায় ছিল না-তাড়াতাড়ি পানি না খেলে পানির পাত্র ফিরিয়ে নিয়ে যাবার নির্দেশ ছিল। প্রতিদিন নিয়মিত বেত্রাঘাতের ব্যবস্থা ছিল। স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে থাকতে হতো। রাত্রে অন্ধকারে রাখা হতো। কাঁকড়া বিছেতে প্রায়ই দংশন করত,তার যন্ত্রণায় সারাক্ষণ ছটফট করতে হতো। কক্ষে দ্বিতীয় কেউ ছিল না যে তার কাছ থেকে একটু সাহায্য ও সান্ত্বনা পাওয়া যেতে পারে। সর্বাঙ্গ দাদ,চুলকানি ও একজিমাতে ভরে গিয়েছিল। তদুপরি চিকিৎসা ও ঔষধ দেওয়া ছিল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।ভারতরত্ন যত্নের অভাবে যেন নোংরা আস্তাকুড়ে চাপা ছিলেন। আরও দুঃখের কথা,হযরত খয়রাবাদী দিনের বেলা সাধারণ মেথরের মত নিজের ও অন্যান্য কয়েদীদের পায়খানা পরিষ্কার করতে হতো। বন্দী বীরও তাই করতেন।
শুধু তাই নয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদী-কে আন্দামানের সেলুলার জেলে বৃটিশরা ষড়যন্ত্র করে নামাজ না পড়ার জন্য এমন কাপড় সরবরাহ করেছিলো, যেন এই বিপ্লবী মহাবীর আল্লামা ঠিক মত শরীরের ছতর আবৃত না করতে পারেন। অথচ এমন নিছক ষড়যন্ত্রও কামিয়াব হয়নি। ইমামে আহলে সুন্নাত খায়রাবাদী নিজের ছতর ঢাকার জন্য বৃদ্ধ শরীরে কোদাল হাতে ছতর পরিমাণ গর্ত খুঁড়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করে নিতেন। এই মুজাহিদ গভীর রাতের নির্জন আঁধারে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে সিজদায় অবনত হতেন, ডুকরে ডুকরে কেঁদে ভারতের স্বাধীনতা ও মুসলমানদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে মুনাজাত করতেন। তাঁর কান্নার আহাজারীর সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে পার্শ্ববর্তী সেল গুলো থেকে আমিন আমিন শব্দে মুখরিত হয়ে উঠতো।
এদিকে ডেপুটি জেলার সাহেব তার কাছে রক্ষিত একটি মূল্যবান ফার্সি পাণ্ডুলিপির যোগ্য অনুবাদকের খুঁজতে গিয়ে মাওলানা ফজলে হকের নাম পেলেন। তাই কারাকর্তা কাগজ-কলম দিয়ে পাণ্ডুলিপিগুলো তাঁর কাছে পাঠালেন।অসুস্থতা ও অস্বাভাবিক মানসিকতা সত্বেও মাওলানা টিকাসহ অনুবাদের কাজ শেষ করলেন। সেই সংগে তথ্যগুলো কোন লেখকের কোন পুস্তকের কোন খণ্ড থেকে নেয়া হয়েছে তাও লিখে দিলেন। জেলার সাহেব সেটা পড়ে বিস্ময়ে হতবাক হলেন এই জন্য যে, কোন পুস্তকের সাহায্য ছাড়া এ কাজ সম্পন্ন করা তো আসলেই বিস্ময়কর। তাই তিনি ফজলে হকের সাথে সাক্ষাৎ করতে এলেন। ঠিক এই সময়েই মাওলানা সাহেব পায়খানা পরিষ্কার করে বিষ্ঠামাখা টিন ও ঝাঁটা নিয়ে অর্দ্ধোলঙ্গ পোশাক পরে ধীরে ধীরে আসছিলেন। সাহেব তাকে হাত খালি করে দাঁড়াতে বললেন। তারপর মূল্যবান পোশাক পরিহিত অবস্থাতেই মাওলানাকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। ক্ষমা চাইলেন ভুলবশতঃ তাঁকে ময়লা পরিষ্কারের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য। ফজলে হক নিজেও কেঁদে ফেললেন এবং ক্ষমা করে দিলেন।এরপর জেলার সাহেব তাঁকে পুরস্কার দিতে চাইলে তিনি বললেন,”আমি আল্লাহর কাছ থেকেই পুরস্কার নেব। মানুষের কাছ থেকে নয়।”
জেলার তাঁকে বললেন, আপনি আমাদের বিরুদ্ধে সরাসরি অস্ত্র ধরেছেন এবং আমাদের সাথে যুদ্ধ করাকে ওয়াজিব বলে ফতোয়া দিয়েছেন আপনার অপরাধ অমার্জনীয়। কাজেই আপনাকে মুক্তি দেয়া ভারতের বড়লাটের ক্ষমতার বহির্ভূত। আপনাকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র লন্ডনের প্রিভি কাউন্সিল। আমি সেখানেই আপনার মুক্তির জন্য সুপারিশ করবো।
ফজলে হক বললেন, আপনার এ উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমাকে মুক্তি দেয়া মানে আমাকে অনুগ্রহ করা। আমি ব্রিটিশের অনুগ্রহ নিব না। লক্ষ্মৌর হাইকোর্ট আমাকে বলেছিল, আমি ব্রিটিশ সরকারের আনুগত্য স্বীকার করলেই আমাকে মুক্তি দেয়া হবে। কাজেই যে আনুগত্যের অনুগ্রহ তখন নেই নি, তা এখনও নিব না। আপনি একজন জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তি তাই বলছি। আমাদের কুরআনে আছে,-“তোমরা কিছুই চাইতে পারবে না,কিন্তু আল্লাহ যা চান,তাই হয়।” কাজেই আমি যে এখানে আছি তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই আছি।
মাওলানা সাহেবের তেজস্বীতা দেখে জেলার সাহেব বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললেন, মুক্তি গ্রহণ করা না করা সেটা আপনার ইচ্ছা,কিন্তু আমার বিবেকতাড়িত কাজ আমি করবই।
মাওলানা সাহেব তাঁর মনের অন্তিম কথাগুলো তিনি কাফনের উপর লিখে যেতেন তাই তিনি ঐ জেলারকে আগেই বলেছিলেন,” আমার আনা কাফনখানি আমি আমার ছেলেদের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। যদি আমার মৃত্যু এখানেই হয় তাহলে আপনারা সরকার অনুমোদিত কাফন দিয়েই আমার কবর দেবেন।”ঐ কাপড়ের উপর নির্বাসিত জীবনে বসে কাব্য আকারে যে কাহিনী তিনি আরবী ভাষার যে লিখেছিলেন সেটাই সুবিখ্যাত “আসসাওরাতুল হিন্দিয়া”(ভারতের কান্না) এর পাণ্ডুলিপি।
তাঁকে অনুবাদের জন্য যে কাগজ দেয়া হতো,তা থেকে কাগজ বাঁচানোর কোন উপায় ছিল না,কারণ কাগজ দেয়া হতো পরিমাণমত। তবে তিনি ছিঁড়াফাড়া টুকরাগুলো রেখে দিতেন। এসব টুকরা কাগজ এবং কাফনের কাপড়ে পেন্সিল অথবা লাকড়ির কয়লা দিয়ে তিনি রচনা করেছিলেন এই অমূল্য গ্রন্থটি। এই বইয়ে তিনি ভারতের স্বাধীনতা বিপ্লবে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং আন্দামানে তাঁর উপর নির্যাতনের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন।এই পুস্তকটি অবশেষে তার ছেলে আব্দুল হক খায়রাবাদীর কাছে পৌঁছে। উলামায়ে্ কেরাম পান্্ডুলিপিটির উর্দু অনুবাদ করেন। বেনিয়া সরকারের তা সহ্য হয়নি। তারা পুস্তকটি বাজেয়াপ্ত করে এবং অনুবাদক ও প্রকাশকের উপর অশেষ নির্যাতন চালায়।
যাই হোক, মাওলানা সাহেবের দুই ছেলে মাওলানা আব্দুল হক ও মাওলানা শামসুল হক দেশের জ্ঞানী-গুণীদের সুপারিশ সংগ্রহ করে পিতার মুক্তির জন্য লন্ডনের প্রিভি কাউন্সিলের কাছে পাঠান।
জেলার সাহেব এবং দেশবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রিভিকাউন্সিল আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদীকে মুক্তি দেন। মুক্তিনামার একটি কপি মাওলানা শামসুল হক খায়রাবাদীর কাছে আরেকটি জেলার সাহেবের কাছে পাঠানো হলো।
মাওলানা শামসুল হক প্রায় চার বছর পর নিজের বরেণ্য পিতাকে ার জন্য মহানন্দে আন্দামানগা
মাওলানা শামসুল হক প্রায় চার বছর পর নিজের বরেণ্য পিতাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য মহানন্দে আন্দামানগামী জাহাজে উঠলেন।
মাওলানা শামসুল হক আন্দামানে নেমে দেখলেন হাজার হাজার রোরুদ্যমান কয়েদী একটি জানাজার পিছনে ধাবমান।তিনি একজন কয়েদীকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কোন কয়েদীর জানাজা ভাই!
কয়েদী চোখ মুছে বলল,আপনি বুঝি নতুন এসেছেন?
-হ্যাঁ!
-এটি ভারত রবি আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদীর জানাজা।
বাক্যবিমূঢ় পুত্র মুক্তিনামাটি হাতে নিয়া ছুটে গিয়ে পিতার বুকে স্থাপন করে খাটিয়া ধরে চলল।
জেলার সাহেবও মুক্তিনামাটি মরহুমের বুকের উপর রেখে খাটিয়া ধরে চলছিলেন। দু জনের চোখেই তখন ভারত মহাসাগরের সমস্ত নোনাজল।
জানাযা হচ্ছে আর জেলার সাহেব একটি পাথরের উপর বসে ভাবছিলেন,সেই দিনের আল্লামার কথাগুলো । শেষ পর্যন্ত তিনি আমাদের অনুগ্রহ গ্রহণ করলেন না। কি তাজা দিলের মানুষ ছিলেন এই খায়রাবাদী।
সত্যি! ফজলে হক খায়রাবাদী বেনিয়ার মুক্তিনামা হাতে নিয়ে স্বদেশে ফিরে আসার পরিবর্তে মহাপ্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে স্বস্থানে চলে গেলেন আর শেষ আশ্রয় গ্রহণ করলেন স্বদেশ থেকে বহু দূরে আন্দামানের মাটিতে।
বন্ধুরা! অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হলো ইনিই হলেন আমাদের ইমামে আহলে সুন্নাত। ইনি সেই মহান পন্ডিত যিনি আরবী, ফার্সি, উর্দু ও হিন্দি ভাষাশাস্ত্রের এক জীবন্ত অভিধান ছিলেন। যাঁর কাছে যুগশ্রেষ্ঠ কবি মীর্জা গালিব নিজের লিখা কবিতার ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য দ্বারস্থ হতেন। আর আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদীর সংশোধনী ব্যতীত মীর্জা গালিব কোন মজলিশে নিজের কবিতা আবৃত্তি করেননি।
ইনিই আমাদের ইমামে আহলে সুন্নাত বৃটিশ ভারতে যিনি প্রথম মুফতি হিসেবে ফতোয়া দিয়েছিলেন বৃটিশ রাজ ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা মুসলমানদের অবশ্যই করণীয়-ফরজে আইন। শুধুমাত্র এই ফতোয়াই সেদিন দিশহারা মুসলিম মিল্লাতকে পথের সন্ধান দিয়েছিল। এই ফতোয়ার মাধ্যমে প্রথম ভারতের মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধভাবে বৃটিশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে রত হয়। আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদী ছিলেন জমানার শ্রেষ্ঠ আলেম। যাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এবং বুজুর্গীর কারণে সমসাময়িক সকল আলেম একবাক্যে তাঁকে জমানার ইমামে আহলে সুন্নাত বলে মেনে নিয়েছিলেন। তিনি চাইলে বিত্ত বিভবের মধ্য আলীশান মহলে শানদার ইমারতে গদীনশীন হতে পারতেন। নিজে ত্বরীক্বতের শায়খ হয়ে তাছাউফ চর্চা করলেও পীর মুরিদির হাদিয়া তোহফর শানদার মজমা এড়িয়ে যিনি দুঃখ ক্লেশের সংগ্রামী জীবনকে নিজ জীবনের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করে নিয়েছিলেন। বৃটিশ রাজের বিরুদ্ধে দেয়া ফতোয়ার মধ্যে নিজের দায়িত্ব সারেন নি। বরং ষাট বছরের এক বৃদ্ধ হয়েও নিজে রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যুবসমাজকে বৃটিশ বেনিয়া বিরোধী সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে গেছেন। সুযোগ থাকা সত্বেও বৃটিশ রাজের সাথে আঁতাত করেননি। নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন আহলে সুন্নাত দাবীদার মানে খাসমহল, রংমহল, পীরজাদা, শাহজাদা লক্বব নয়- অকুতোভয় জেহাদী চেতনার মধ্য দিয়ে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়ার মধ্যেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই হলো আমাদের ইমামে আহলে সুন্নাত।

তথ্যসূত্রঃ
১)আযাদী আন্দোলনঃ১৮৫৭ (আসসাওরাতুল হিন্দিয়া এর বঙ্গাবুবাদ)
২) চেপে রাখা ইতিহাস,
৩) উলামায়ে হিন্দ কা শানদার মাজি,
৪)আন্দামানে বন্দী বীর,
৫)উইকিপিডিয়া,

[related_post themes="flat" id="367"]